আজকের ডিজিটাল যুগে আমাদের জীবনের বেশিরভাগ কাজই স্মার্টফোনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
কিন্তু প্রতিদিন যত বেশি আমরা ইন্টারনেটে সংযুক্ত হচ্ছি, তত বেশি সাইবার হুমকির মুখে পড়ছি।
এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন প্রায়ই উঠে আসে —
👉 “iPhone বেশি নিরাপদ নাকি Android?”
আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব দুই সিস্টেমের নিরাপত্তা দিকগুলো, যাতে তুমি নিজেই ঠিক করতে পারো কোনটা তোমার জন্য সেরা।
🔒 ১. অপারেটিং সিস্টেমের গঠন: বন্ধ বনাম খোলা প্ল্যাটফর্ম
-
iPhone (iOS):
Apple-এর iOS একটি “Closed Source” সিস্টেম। মানে, এর কোড সাধারণ ব্যবহারকারীরা পরিবর্তন করতে পারে না।
এতে ভাইরাস বা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি তুলনামূলক কম, কারণ Apple প্রতিটি অ্যাপ, আপডেট এবং সিকিউরিটি প্যাচ নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে। -
Android:
Android একটি “Open Source” সিস্টেম। মানে, এটি বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ফোনে কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করে (Samsung, Xiaomi, Vivo, Oppo ইত্যাদি)।
এই স্বাধীনতাই আবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করে — কারণ সব নির্মাতা সমান দ্রুত নিরাপত্তা আপডেট দেয় না।
🔰 সংক্ষেপে: iPhone বেশি নিয়ন্ত্রিত, Android বেশি স্বাধীন — কিন্তু স্বাধীনতার সাথে ঝুঁকিও বেশি।
🧩 ২. অ্যাপ স্টোর নিরাপত্তা
-
Apple App Store:
প্রতিটি অ্যাপ App Store-এ আপলোড হওয়ার আগে Apple নিজে স্ক্যান করে, অনুমোদন দেয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তাই এখানে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার প্রবেশের সুযোগ খুবই কম। -
Google Play Store:
Google-ও এখন Play Protect চালু করেছে, কিন্তু কিছু ক্ষতিকর অ্যাপ মাঝে মাঝে ফসকে যায়।
তাছাড়া অনেকেই “Third-Party App Store” বা “APK File” থেকে অ্যাপ ইনস্টল করে — যা হ্যাকারদের সহজ টার্গেট।
⚠️ উপসংহার: অ্যাপ সিকিউরিটিতে iPhone এখনো এগিয়ে।
🔐 ৩. সফটওয়্যার আপডেট ও সিকিউরিটি প্যাচ
-
iPhone:
Apple পুরনো ফোনগুলোকেও ৫–৬ বছর পর্যন্ত নিয়মিত আপডেট দেয়।
যেমন iPhone 11 এখনো সর্বশেষ iOS 18 আপডেট পাচ্ছে — যা নিরাপত্তা বজায় রাখে। -
Android:
অনেক ফোন নির্মাতা মাত্র ২–৩ বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট দেয়।
ফলে পুরনো ফোনগুলো হ্যাকারদের সহজ শিকার হয়ে পড়ে।
✅ ফলাফল: দীর্ঘমেয়াদি সিকিউরিটি সাপোর্টে iPhone জয়ী।
🧠 ৪. ডাটা প্রাইভেসি ও ট্র্যাকিং কন্ট্রোল
-
Apple:
Apple ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়।
“App Tracking Transparency” নামের ফিচারের মাধ্যমে তুমি দেখতে পারো কোন অ্যাপ তোমার ডেটা ব্যবহার করছে এবং চাইলে বন্ধও করতে পারো। -
Google (Android):
Google যদিও এখন Privacy Dashboard এনেছে, কিন্তু তারা নিজেরাই বিজ্ঞাপন ও অ্যানালিটিকসের জন্য অনেক ডেটা সংগ্রহ করে।
তাই Android-এ প্রাইভেসি কন্ট্রোল তুলনামূলকভাবে কম স্বাধীন।
🔎 উপসংহার: প্রাইভেসির ক্ষেত্রে iPhone অনেক বেশি শক্তিশালী।
🧱 ৫. ভাইরাস ও হ্যাকিং ঝুঁকি
-
iPhone:
iOS সিস্টেমে “Sandbox” নামক সিকিউরিটি ফিচার আছে — যা প্রতিটি অ্যাপকে আলাদা করে রাখে।
ফলে এক অ্যাপ থেকে আরেক অ্যাপে ভাইরাস ছড়ানো প্রায় অসম্ভব। -
Android:
Android-এর খোলা সিস্টেমের কারণে ভাইরাস অ্যাটাক ও ম্যালওয়্যার ইনফেকশন অনেক বেশি দেখা যায়।
Play Store-এর বাইরে থেকে অ্যাপ ইনস্টল করলে ঝুঁকি আরও বাড়ে।
🚨 সিদ্ধান্ত: iPhone নিরাপত্তায় অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
⚙️ ৬. পাসওয়ার্ড, ফেস আইডি ও বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা
-
Apple Face ID / Touch ID — সেন্সরগুলো খুবই উন্নত এবং Secure Enclave নামে আলাদা চিপে তথ্য সংরক্ষণ করে।
-
Android ফোনেও এখন অনেক উন্নত ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক আছে, কিন্তু কিছু ফোনে নিরাপত্তা দুর্বল থাকে (বিশেষ করে বাজেট ফোনে)।
🔐 Apple-এর বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি সবচেয়ে স্থিতিশীল।
🏁 ৭. উপসংহার: কোনটা নিরাপদ?
| বিষয় | iPhone | Android |
|---|---|---|
| সিস্টেম নিরাপত্তা | ✅ শক্তিশালী | ⚠️ মাঝারি |
| অ্যাপ স্টোর সুরক্ষা | ✅ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত | ⚠️ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ |
| সফটওয়্যার আপডেট | ✅ দীর্ঘমেয়াদী | ⚠️ সীমিত |
| ডেটা প্রাইভেসি | ✅ উচ্চ | ⚠️ তুলনামূলক কম |
| ভাইরাস ঝুঁকি | ✅ খুবই কম | ⚠️ বেশি |
📊 ফাইনাল Verdict:
নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ও আপডেটের দিক থেকে iPhone অনেক এগিয়ে।
তবে Android ব্যবহারকারীর জন্যও নিরাপদ থাকা সম্ভব — যদি তারা অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করে, সময়মতো আপডেট নেয়, আর অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ না ইনস্টল করে।
🧭 শেষ কথা:
যদি তুমি এমন একজন ব্যবহারকারী হও যে নিজের ডেটা ও গোপনীয়তা সবচেয়ে মূল্যবান মনে করো, তাহলে iPhone তোমার জন্য নিরাপদ পছন্দ।
আর যদি তুমি স্বাধীনতা ও কাস্টমাইজেশনে বিশ্বাস করো, তাহলে Android ব্যবহার করো কিন্তু সতর্ক থাকো।

No comments:
Post a Comment